আলবার্ট আইনস্টাইন-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আইন্সটাইন – পৃথিবীময় সমধিক পরিচিত একটি নাম। শিশু থেকে বুড়ো কে না জানে নামটি। নামটি কখনো শোনেনি এমন কাউকে খুঁজেপা ওয়া শুধু মুশকিলই নয় বলতে গেলে অসম্ভবও!
তো নামটিতো আমরাখু ব ভালোভাবেই চিনি তবে এই নামটি যে মানুষটির, সে মহানমা নুষটির জীবন সম্পর্কে আর কতটুকুই বা জানি ! এই যে নামটি, কেন এতবি খ্যাত? কী করেছিলো যে মানুষটি? কেমন ছিলেন তিনি তার ব্যাক্তিগত ও পেশাগত জীবনে? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আজকের এই আলোচনায়।
মেধাবী এ ইহুদি বিজ্ঞানীর জন্ম ১৪ মার্চ, ১৮৭৯ জার্মানির উলম্ শহরে।তার পুরো নাম আলবার্ট আইনসটাইন। আইন্সটাইন তার বংশপরিচয়।বাবা হেরমান আইন্সটাইনের ছিলো তড়িৎ রাসায়নিক কারখানা যা তার ভাই জ্যাকব ও হেরমান পরিচালনা করতেন। মা পলি ছিলেন গৃহিণী (মা এর ইচ্ছাতেই ষষ্ঠ বর্ষী ছোট্ট আইন্সটাইন বেহালা বাজাতে শিখেছিলেন)। আরেকটি ২ বছরের কনিষ্ঠ বোন ছিলো আইন্সটাইনের যার নাম 'মাজা। বাবার ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে আইন্সটাইনের শৈশব কেটেছিলো মিউনিখ শহরে।ছোটবেলা থেকেই আইন্সটাইন ছিলেন খুব লাজুক, স্বল্পভাষী ও বিনয়ী প্রকৃতির। প্রচলিত আছে, আইন্সটাইন এতটাই গোটানো স্বভাবের ছিলেন যে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তার বাবা-মা জানতোই না যে সে কথা বলতে পারে একদিন খাবার টেবিলে আইন্সটাইন হঠাৎ বিরক্তিভরে বলে ওঠেন 'স্যুপটা এত গরম কেন ?' শিশু আইন্সটাইনের মাঝে সেকালে মেধার উল্লেখযোগ্য কোনো লক্ষণ পাওয়া পায়নি। তিনি এতটাই ইনট্রোভার্ট ছিলো যে মা-বাবা তাকে নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকতেন। স্কুলে ও তেমন ভালো ফলাফল দেখাতে পারেননি আইন্সটাইন।তবে ৬ বছর বয়সে তার বাবা তাকে একটি কম্পাস উপহার দেয়। এখান থেকেই তিনি আগ্রহী হয়ে পড়েন সেই অদৃশ্য শক্তি সম্পর্কে জানতে যা ঐ কম্পাসের কাটা গুলোর দিক পরিবর্তন করেছিলো। সেই কৌতূহলই তাকে জানতে সাহায্য করেছিলো চৌম্বকশক্তি ও অভিকর্ষ বল সম্বন্ধে।
বালক আইন্সটাইনের মাঝে অবশ্য কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।১২ বছর বয়সে হঠাৎই তিনি খুব ধার্মিক হয়ে উঠেন, পাশাপাশি ধীরে ধীরে বিজ্ঞানেও আগ্রহী হতে থাকেন তিনি। সেসময় ম্যাক্স টালমুড নামে এক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রের সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে তার পরিবারের। প্রায়ই আইন্সটাইনের বাসায় আসা যাওয়া ছিলো টালমুডের। আইন্সটাইনের সাথে একটা সখ্যতাও ছিলো তার। বিজ্ঞান ও গণিতের অনেক বই আইন্সটাইন এই টালমুডের থেকে ধার নিয়ে পড়তেন। পদার্থবিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতের অনেক কিছুই জানতে পেরেছিলেন এই মাক্স টালমুড থেকেই।
ইউক্লিডের Elements বইটি পড়ে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন বালক আইন্সটাইন যার কারণে এই বইটিকে 'পবিত্র ছোট্ট জ্যামিতির বই' বলে আখ্যা দেন সারাজীবন। ধীরে ধীরে আইন্সটাইনের বিজ্ঞান ও গণিতের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে এবং তার এ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে ধর্মীয় চেতনা খুব সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে ও একটি সময় তিনি শুধু বিশ্বাস নির্ভর ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণহীন ধর্মীয় বিষয়াবলিকে পাশে রেখে যুক্তিতর্কমূলক প্রমাণীত সত্য বিজ্ঞানের আশ্রয় গ্রহণ করেন।
বিজ্ঞান ও গণিতে কিশোর আইন্সটাইন ক্রমাগত ভালো ফলাফল করতে শুরু করলেন কিন্তু ঠিক এ সময়ই তার বাবা প্রতিনিয়ত ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকেন। একটা সময়ে মিউনিখ এ যে তার কারখানাটি বিক্রি করে সপরিবারে ইতালির মিলান চলে যান। এরপর তারা কিছু মাস পাভিয়াতে থাকেন।পড়াশোনার জন্য আইন্সটাইন মিউনিখে একটি বোর্ডিং হাউজে যান। এ সময় তিনি জীবনের ১ম গবেষণাপত্র The Investigation of the state of Aethen in Magnetic Fields লিখেন। তবে স্কুল থেকে ৬ মাস পরেই তিনি মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে মা বাবার কাছে পাভিয়াতে চলে যান।
১৮৯৫ সালে আইন্সটাইন জুরিখের সুইজারল্যান্ডীয় ফেডারেল পলিটেকনিক থেকে প্রবেশিকা পাশ্ করেন যেখানে তিনি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে সাফল্যজনক উচ্চ গ্রেড তুলতে পারলেও অকৃতকার্য হন ফরাসি ভাষা ; রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে। । এরপর একই বছরই তিনি সুইজারল্যান্ডের আরগোভিয়ান ক্যান্টনাল স্কুলে ভর্তি হন যেখানে তিনি মূলত ম্যাক্সওয়েলের তাড়িৎচৌম্বক তত্ত্ব অধ্যায়ন করেন। ১৮৯৬ সালে বাবা-মার অনুমতিক্রমে আইন্সটাইন জার্মান কিংস্টম অফ উরটেনবার্গের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। ৫ বছর নাগরিকত্বহীন থাকার পর ১৯০১ এর ২১ ফেব্রুয়ারি সুইজারল্যান্ড এর নাগরিক হন। জীবদ্দশায় তিনি সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন।
১৭ বছর বয়সে আইন্সটাইন জুরিখ পলিটেকনিকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতার ডিপ্লোমা ভর্তি হন। ১৯০০ তিনি তার স্নাতক ও ১৯০৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।জুরিখ পলিটেকনিকএ ডিপ্লোমা করার সময় মেলিভা মেরিকের সাথে পরিচিত হন তিনি। ধীরে ধীরে তারা খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন, আর এই বন্ধুত্ব এক সময় প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। ১৯০৩ সালে অবশ্য এই ২ মিলেভাকেই বিয়ে করেন আইন্সটাইন। তাদের ঘরে তিন সন্তানের জন্ম হয়।
তবে তাদের প্রথম সন্তান লিসেল এর ব্যাপারে তেমন কিছুই জানা যায়নি। ধারণা করা হয় শিশুবয়োসেই মেয়েটি মারা বা কেউ তাকে দত্তক নেয়। তবে মিলেবা ও আইম্মটাইনের চিঠি থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে লিসেলের জন্ম ১৯০২ সালে।তাদের অন্য দুইটি সন্তান হান্স আইন্সটাইন ও এডুয়ার্ডের জন্ম যথাক্রমে ১৯০৪ ও ১৯১০ সালে। ১৯০১ সালে যখন আইন্দটাইন সুইজারল্যান্ডের বার্নের ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি নামক একটি পেটেন্ট অফিসে কর্মরত ছিলেন তখন তার বন্ধুরা মিলে একটি ক্লাব গঠন করেন ও দ্যা অলিম্পিয়া একাডেমি' নামে যেখানে মিলেডাও একজন সদস্য ছিলেন।মিলেভা ও আইন্সটাইনের সম্পর্ক ভালো হলেও ১৯৯৪ তে তারা বার্লিন গেলেও সন্তানদের নিয়ে কিছুদিন পরই মিলেভা ফিরে আসেন কেননা এ সময় আইন্সটাইন তার এক চাচাতো বোন এলসা লভেন্থালের প্রেমে পড়েন। ৫ বছর আলাদা থাকার পর১৯১৯ সালে মিলেভা ও আইন্সটাইনের বিচ্ছেদ ঘটে ও আইন্সটাইন এলসাকে বিয়ে করেন। অবশ্যৎ ১৯৩৬ এ এলসার সাথেও বিচ্ছেদ ঘটে আইনশটাইনের।
১৯২১ সালে আইন্সটাইন আলোক তড়িৎ ক্রিয়া বিষয়ে তার কাজের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান ও একই সালে তিনি রয়েল সোসাইটির একজন বিদেশী সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।
পদার্থবিজ্ঞানে আইন্সটাইনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্রকে একত্রে বলা হয় অ্যানাস মিরাবিলিস ।এছাড়া পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আইফটাইনের ৩০০ এর অধিক গবেষণাপত্র রয়েছে।
এ মহান বিজ্ঞানি ১৯৪০ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জন করেন এবং এ যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রিন্সটনের নিউ জার্সিতে ১৯৫৫ সালের ১৮এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো ৭৬ বছর। এভাবেই প্রস্থান হয় আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জনক ও মৌলিক গবেষক আমাদের অতি পরিচিত একটি নাম আলবার্ট আইন্সটাইনের। মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নিউ জার্সির হাসপাতালে মৃত্যুপথযাত্রী আহন্সটাইন জার্মান ভাষায় কিছু কথা বলেছিলেন যা আমরা আর কোনোদিনো জানতে পাই পারবো না কেননা তার ঘরে যে নার্স ছিলেন তিনি জার্মান ভাষা জানতেন না।
১৯৯৯ সালে এই মহামতি বিজ্ঞানীকে 'শতাব্দীর সেরা ব্যাক্তি' বলে আখ্যা দেয় টাইম ম্যাগাজিন।
0 Comments