প্যারালাল ইউনিভার্স / সমান্তরাল মহাবিশ্ব

 প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব কী? ( What is Parallel Universe?) 


প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব হলো বিজ্ঞানের এমন একটি তত্ত্ব যেখানে বলা হয়েছে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের কথা যা কিনা হতে পারে একাধিক। স্টার ট্রেকের মতো ধারাবাহিকে বা যেকোনো
বিজ্ঞানকল্পকাহিনীতে একটি অতি পরিচিত বিষয় এই “বিকল্প মহাবিশ্ব'।

                 ছবিঃ সমান্তরাল মহাবিশ্ব - প্যারালাল ইউনিভার্স 

সমান্তরাল মহাবিশ্ব কি শুধুই বিজ্ঞানকল্পকাহিনিতে থাকা রহস্যময় গল্পের আখ্যান নাকি আধুনিক পদার্থবিদ্যার সুত্র একে সমর্থন করে? সেটিই জানা যাবে আজকের আলোচনায়।

 শুধু বিজ্ঞান কল্পকাহিনি নয় ইতিহাসের পাতা আওড়ালে দেখা যাবে প্রাচীন ধর্মগুলোর বিশ্বাসে স্থান করে নিয়েছে এক 'অজানা স্থান' বা 'অন্যস্থান” যেখানে সৃষ্টিকর্তা বা  প্রেতাত্মাদের বসবাস বলে বিশ্বাস সেসব ধর্মাবলম্বীদের। সাধারণত তারা এ 'অন্য স্থান' টিকে স্বর্গ বা নরক হিসেবে আখ্যায়িত করে। অনেক ধর্মতত্ত্ববিদদের মতে এসব নির্দেশ করে যে সৃষ্টিকর্তা হয়তো কোনো উচ্চতর মাত্রার স্থানে থাকেন। বর্তমানে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম বিতর্কিত বিষয় হলো প্যারালাল ইউনিভার্স। 

প্রশ্ন উঠতে পারে প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব কত ধরণের? 

প্রায় ৩ ধরণের প্যারালাল ইউনিভার্স এর আলোচনা করা হয়।

 ১. হাইপারস্পেস বা উচ্চতর মাত্রার প্যারালাল ইউনিভার্স

২. মাল্টিভার্স বা বহুবিশ্ব

৩. কোয়ান্টাম প্যারালাল ইউনিভার্স 

সাধারণ জ্ঞান অনুযায়ী, আমরা যে বিশ্বে বসবাস করি সেটি ত্রিমাত্রিক। অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা এ তিনটি স্থানিক মাত্রার সমন্বয়ে গঠিত আমাদের এ জগৎ। তবে সময়কে বিশেষ ক্ষেত্রে চতুর্থমাত্রা
হিসেবেও ধরা হয়। তবে এর থেকে উচ্চতর মাত্রার অস্তিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে বিতর্ক কিছু নতুন নয়। অ্যারিস্টটল, টলেমি, জন ওয়ালিসের মতো মহাজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করতেন উচ্চতর মাত্রার অস্তিত্বের সম্ভাবনা নিছকই ভিত্তিহীন ধারণা। তারপরও যদি 'বিজ্ঞান' এমন কিছুকে সমর্থন করে তবে তা হবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। সমান্তরাল মহাবিশ্বের অস্তিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে ইতিবাচক সাড়া জাগিয়েছেন যেসব মনীষি তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন কার্ল গাউস, জর্জ বার্নার্ড রিম্যান, থিওডর কালুজাসহ 
অনেকেই।

 কালুজুয়ার স্নায়ু শিহিরওকে সেই তত্ত্বে আলোকে দেখানো হয় পঞ্চম মাত্রায় আন্দোলন থাকে ঢেউ হিসেবে। অন্যদিকে স্ট্রিং থিওরি বা থিওরি অফ এভরিথিং নামে আখ্যায়িত তুলনামূলক নতুন ও উদ্ভট থিওরি ব্যাপারটিকে ব্যাখ্যা করে একটু অন্যভাবে। এ তত্ত্বমতে, ইলেকট্রন ও অন্যান্য অতি পারমানবিক কণা আসলে একটি স্টিং বা সুতার কম্পন ছাড়া কিছই নয়। এ থিওরির উদ্ভট বৈশিষ্ট্য হলো স্ট্রিংগুলো কম্পিত হতে পারে শুধু ১০ মাত্রাকে। উচ্চতর মাত্রা ছাড়াও আরেক ধরণের সমান্তরাল মহাবিশ্বের ভবিষ্যদ্বাণী করে স্টিং তত্ত্ব। একে বলা হয়- মাল্টিভার্স বা বহুবিশ্ব। স্ট্রিং থিওরির আরেকটি বিতর্কিত আলোচনা হলো কেন এ স্ট্রিং থিওরির ৫ টি আলাদা আলাদা সংস্করণ আছে? 

তবে ১৯৯৪ সালে এডওয়ার্ড উইটেন ও পল টাউনসেন্ড মন্তব্য করলেন ৫টি স্ট্রিং থিওরি আসলে একই হবে যদি এতে ১১তম মাত্রা যোগ করা হয়। ১১ মাত্রা আমাদের সামনে একটি নতুন চিত্র উপস্থাপন
করে যেখানে আমাদের মহাবিশ্ব স্থান-কালের একটি মাত্রায় ভেসে বেড়ানো পর্দার মতো। এখানে
সম্ভাবনা দেখা দেয় যেখানে আমাদের মহাবিশ্ব হয়তো অসংখ্য মহাবিশ্বের একটি মাল্টিভার্সে টিকে আছে।
হয়তো এসব মহাবিশ্ব বুদবুদের মতো একটি আরেকটির সাথে যুক্ত হয়ে ১১মাত্রিক হাই পারস্পেশে ভাসমান স্ট্রিং থিওরির এক হিসাবমতে এ ধরণের বুদবুদ মহাবিশ্ব থাকার সম্ভাবনা এক গুগলসংখ্যক বা ১০^১০০ ।
প্রকৃতির ধ্রুবকগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আমাদের মহাবিশ্বের অনেকগুলো প্যারামিটারের বিস্ময়করভাবে সুষম সমন্বয় আছে ।  কোয়ান্টাম প্যারালাল ইউনিভার্স নামক আরেক ধরণের সম্ভাবনা সুষম সমন্বয় আছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন রিস এ সম্পর্কে লিখেছেন, "এই সুষম সমন্বয় আসলে মাল্টিভার্সের প্রমাণ দেয়।" 

আর এক ধরণের সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা রয়েছে। ১৯৫৭ সালে কোয়ান্টাম তত্ত্বের আলোকে বহুবিশ্ব থাকার ধারণা তুলে ধরেন হিউগ ইভেরেট। এমআইটির পদার্থবিদ অ্যালান গুথও এর স্বপক্ষে কথা বলেন। বর্তমানে হলে বহু বিশ্ব তত্ত্বমতে মহাবিশ্ব কেবল সমান্তরাল অবস্থার মাঝে থাকতে পারে, যার অনেক পদার্থবিদ বলেন ইলেকট্রন অবশ্যই কোয়ান্টাইত। এমনটি হলে অনেকগুলো সমান্তরাল অবস্তার মাঝে থাকতে পারে, যার সবগুলো একটি প্রধান ওয়েভ ফাংশন দিয়ে সংজ্ঞায়িত। 

আধুনিক পদার্থবিদ্যার কোনো সুত্রকেই এখনও পর্যন্ত লঙ্ঘণ করেনি এ সমান্তরাল মহাবিশ্ব তত্ত্ব তবে এর অস্তিত্ব সম্বন্ধে বাস্তবিক ধারণা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি অনেক পিছিয়ে।

Post a Comment

0 Comments